মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৯:৪৯ পূর্বাহ্ন

পিপল এন টেকের সেমিনার অনুষ্ঠিত

পিপল এন টেকের সেমিনার অনুষ্ঠিত

স্বদেশ রিপোর্ট ॥ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশন ও এর সাইড লাইনে বিভিন্ন বৈঠকের পাশাপাশি পিপল এন টেক ফাউন্ডেশনের আয়োজনে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজিস) শীর্ষক গুরুত্বপূর্ণ এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। ‘বাংলাদেশ : রোড টু এসডিজি, দ্য রোল অব ইনফরমেশন টেকনোলজি টু অ্যাচিভ দ্য গোল উইদিন ২০৩০’ শীর্ষ উচ্চ পর্যায়ের এ সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এসডিজিস বিষয়ক সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিপল এন টেকের সিইও এবং পিপল এন টেক ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার আবু বকর হানিপ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে অনেক বাধা রয়েছে। এসব বাধা অতিক্রম করতে হলে মানুষকেই সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে। আর এজন্য দরকার মানুষের ক্ষমতায়ন।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ২০১১ সালে তিনি জাতিসংঘের সেকেন্ড কমিটির চেয়ারম্যান থাকার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবে ‘পিপলস অ্যাম্পাওয়ারমেন্ট : ম্যান এন্ড উইম্যান’ পাশ হয়েছিল। ড. মোমেন বলেন, ‘মানুষকে যদি ক্ষমতায়ন করতে হয় তাহলে কয়েকটি বিষয় অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত। প্রথমত, দারিদ্র দূরীকরণ, গুণগত প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি শিক্ষা, যারা অবহেলিত, বৈষম্যের শিকার তাদের অন্তর্ভূক্তিকরণ প্রভৃতি।’ তিনি জানান, এসব বিষয়ে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এসডিজিস বিষয়ক সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদ। ডিজিটাল উপস্থাপনার মাধ্যমে তিনি টেকসই উন্নয়ন কি, কিভাবে তা অর্জনের পথে অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশ তা তুলে ধরেন। আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘১৭টি অভিষ্ট লক্ষ্যের মধ্যে বেশিরভাগই অর্জন করেছে বাংলাদেশ। বাকিগুলোও অর্জনের পথে রয়েছি আমরা। এর মধ্যে দুয়েকটি লক্ষ্য বাংলাদেশের সাথে সরাসরি যুক্ত নয়। তিনি জানান, বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে চলেছে তাতে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজিস (সাসটেইন্যাবল ডেভেলপমেন্ট গোলস) বাস্তবায়নে সক্ষমতা অর্জন সম্ভব।’
স্বাগত বক্তব্যে পিপল এন টেকের প্রতিষ্ঠাতা সিইও ইঞ্জিনিয়ার আবু বকর হানিপ জাতিসংঘের ব্যস্ত কর্মসূচির মধ্যেও এসডিজিস বিষয়ক সেমিনারে অংশ নেয়ায় সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘মানুষের ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে প্রস্তাব জাতিসংঘে পাশ হয়েছে, পিপল এন টেক দেশে বিদেশে সেই ক্ষমতায়নেরই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইঞ্জিনিয়ার হানিপ জানান, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৬ হাজার মানুষকে আইটি ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দিয়ে উন্নত বেতনে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছে পিপল এন টেক। যাদের বেশির ভাগই আগে অড জব করতেন। তারা এখন বছরে ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ ডলার বেতনে চাকরি করছেন। তিনি বলেন, এসডিজিস এর অভিষ্ঠ লক্ষ্যমাত্রার একটি হলো মানসম্পন্ন শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিতকরণ। পিপল এন টেক বাংলাদেশেও হাজার হাজার মানুষকে উন্নত ও প্রযুক্তি শিক্ষা দিয়ে তাদের ক্ষমতায়নে সহায়তা করছে বলে জানান তিনি। ইঞ্জিনিয়ার হানিপ বলেন, “বাংলাদেশের মেধাবী অনেকেই বিদেশে এসে আর দেশে ফিরে যাননি। তাই বিদেশে আমাদের মেধা পাচার বা ব্রেইন ড্রেইন হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু আমরা যারা বিদেশে আছি তারা যদি এখানে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে দেশের কল্যাণে কাজে লাগতে পারি তাহলে এটি ‘ব্রেইন কন্ট্রিবিউটিং এগেইন’ হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।” তিনি বলেন, ‘আসুন, সরকারের এসডিজিস বাস্তবায়নে আমরা যে যার অবস্থানে থেকে কাজ করিÑ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৩তম জন্মদিনে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।’
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নিউইয়র্কের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা, ডা. মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নÑবিএফইউজে’র সভাপতি মোল্লা জালাল, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমীন, সেন্টার ফর এনআরবি’র চেয়ারম্যান সেকিল চৌধুরী, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট রেজাউল করিম রেজনু প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক ও টিভি উপস্থাপক হাসানুজ্জামান সাকী।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন পিপল এন টেকের সাবেক দুই শিক্ষার্থী মারুফ আহমেদ ও ইসরাত জাহান ইভা। অনুষ্ঠানে কর্মক্ষেত্রে তাদের সফলতার গল্প শোনান তারা। সেমিনারে যুক্তরাষ্ট্রের বিশিষ্ট নাগরিকরা উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারের স্ট্রেটেজিক পার্টনার ছিল এরআরবি কানেক্ট।
মারুফ আহমেদ বলেন, ‘২০১৪ সালে উবার চালিয়ে আমি আমার পরিবারকে চালিয়েছি। এক সময় অর্থের অভাবে আমার পরিবার দেশে ফিরে যায়। এরপর আমি পিপল এন টেকের সন্ধান পাই। তারা আমাকে আশ্বস্ত করে সফলভাবে চার মাসের আইটি প্রশিক্ষণের পর বছরে একশ হাজার ডলারের উপরে বেতন পাওয়া সম্ভব।’ মারুফ বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের মানুষ। সব সময়ই আমাদের অনেককে প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে চলতে হয়। তাই প্রথমে এসব কথা আমার কাছে ভাওতাবাজি মনে হয়েছিল। কিন্তু সত্যি আমি বাস্তবে এর প্রমাণ পেয়েছি। আমি এখন বার্ষিক এক লাখ ডলার বেতনে চাকরি করছি।’
ইসরাত জাহান ইভা বলেন, ‘আমি যখন পিপল এন টেকে কোর্স করছি তখন আমার বন্ধুরা সত্তর হাজার ডলারের বেতনে চাকরি পাব বলে আমার সাথে ঠাট্টা করেছিল। আমি তখন রেস্টুরেন্টে কাজ করতাম। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ, আমি পিপল এন টেকের সবার সহায়তায় কোর্স সম্পন্ন করতে পেরেছি। ২০১৭ সালে এ দেশে আসার পর আমি এখন সত্তর হাজার ডলার নয়, সিক্স ডিজিট অর্থাৎ এক লাখ ডলারেরও বেশি বেতনে কাজ করছি।’
অনুষ্ঠানের অতিথিরা মুগ্ধ হয়ে এই দুই শিক্ষার্থীর বক্তব্য শোনেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যারা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি যে কোনোদিন বছরে ৫০ হাজার ডলার বেতনে কাজ করবেন তাদেরকে আবু বকর হানিপ সাহেব ৮০ হাজার, এক লাখ ডলার বেতনে চাকরি পাইয়ে দিচ্ছেন। এজন্য জনাব হানিপকে আমি সব সময় ‘ম্যাজিক ম্যান’ বলে সম্বোধন করি। কেননা, তিনি সত্যিই ম্যাজিক দেখিয়েছেন। তিনি এখন বাংলাদেশেও পিপল এন টেকের কার্যক্রম বিস্তৃত করেছেন।’
আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘পিপল এন টেক যেভাবে মানুষকে ক্ষমতায়ন করছে এভাবে সবাই এগিয়ে এলে আমরা দ্রুত আমাদের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।’
আবু বকর হানিপ জানান, সম্প্রতি বাংলাদেশে তিনি পিপল এন টেকের কার্যাক্রম শুরু করেছেন। ভবিষ্যতে তিনি দেশের প্রতিটি উপজেলায় পিপল এন টেকের কার্যক্রম পরিচালনা করতে চান। তাহলে অচিরেই ভারতের মতো বাংলাদেশেও আইটি ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার প্রধানমন্ত্রীর তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের স্বপ্ন বাস্তবায়নে তার প্রতিষ্ঠান নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, সেমিনারের বিষয়বস্তু সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস (এসডিজিস) বা টেকসই উন্নয়ন বলতে ওই ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডকে বোঝায় যার মাধ্যমে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাও নিশ্চিত হয় আবার প্রকৃতি এবং বাস্তুতন্ত্র বা ইকোসিস্টেমেও কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না। অর্থাৎ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা হলো, ভবিষ্যত আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংক্রান্ত একগুচ্ছ লক্ষ্যমাত্রা।
১৯৮৭ সালে টেকসই উন্নয়নের ব্যাপারটা প্রথম আলোচনায় আসে ব্রুন্টল্যান্ড কমিশনের রিপোর্টে। ২০০০ সালে শুরু হওয়া ‘মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল’ বা এমডিজি অর্জনের সময় শেষ হয় ২০১৫ সালে। বাংলাদেশ এমডিজি অর্জনে সফলতা দেখিয়েছে। এরপর জাতিসংঘ ঘোষণা করে ১৫ বছর মেয়াদি ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস’ বা এসডিজিস। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির ১৭টি লক্ষ্য পূরণ করতে হবে।
এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা হলোÑ ১. দারিদ্র্য বিমোচন ২. খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টির উন্নয়ন ও কৃষির টেকসই উন্নয়ন ৩. সকলের জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা ৪. মানসম্পন্ন শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিতকরণ ৫. লিঙ্গ সমতা ৬. সুপেয় পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ৭. সকলের জন্য জ্বালানি বা বিদ্যুতের সহজলভ্য করা ৮. স্থিতিশীল ও অংশগ্রহণমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, পূর্ণকালীন উৎপাদনমূলক কর্মসংস্থান ও কাজের পরিবেশ ৯. স্থিতিশীল শিল্পায়ন এবং উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা ১০. দেশের অভ্যন্তরে ও আন্তঃরাষ্ট্রীয়বৈষম্য হ্রাস ১১. মানব বসতি ও শহরগুলোকে নিরাপদ ও স্থিতিশীল রাখা ১২. সম্পদের দায়িত্বপূর্ণ ব্যবহার ১৩. জলবায়ু বিষয়ে পদক্ষেপ ১৪. টেকসই উন্নয়নের জন্য সাগর, মহাসাগর ও সামুদ্রিক সম্পদ সংরক্ষণ ও পরিমিত ব্যবহার নিশ্চিত করা ১৫. ভূমির টেকসই ব্যবহার ১৬. শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক সমাজ, সকলের জন্য ন্যায়বিচার, সকল স্তরে কার্যকর, জবাবদিহি ও অংশগ্রহণমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং ১৭. টেকসই উন্নয়নের জন্য এ সব বাস্তবায়নের উপায় নির্ধারণ ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের স্থিতিশীলতা আনা। এসব লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ১০টিরও বেশি বাংলাদেশ ইতোমধ্যে অর্জন করেছে। বাকিগুলো অর্জনের পথে অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশ।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877